অবশেষে শনির বুকে মৃত্যু হলো ক্যাসিনি ।

  • 4 years ago

মহাকাশের বুকে এক হৃদয় মোচড়ানো বিদায়ের গল্প, যার ছবি প্রকাশ করল নাসা
বিদায় কেমন হয়? আসলে বিদায়ের নানান রকম-ফের আছে। পরিস্থিতির নিরিখে বিদায়ের মানেও হয় আলাদা। আমরা যখন বন্ধু-কে টা-টা করি তখন তাকে বলি 'বিদায়'। কিন্তু, সেই বিদায়ের মধ্যে থাকে পুনর্মিলনের আশা। আবার পরিবারের প্রিয়জনরা কেউ কোথাও গেলে বলেন 'বিদায়'। কিন্তু, এখানেও বিদায় মানে পুনর্ছেদ নয়। মিলনের আশা নিয়েই এক্ষেত্রে আমরা 'বিদায়' সম্ভাষণ দেই। আবার এমন কিছু কিছু পরিস্থিতি আছে যেখানে 'বিদায়' মানে সত্যি সত্যি একে-অপরের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া। বহুক্ষেত্রে এমন 'বিদায়' আমাদের মনের আবেগকে ছুঁয়ে যায়। ভারাক্রান্ত করে ফেলে আমাদেরকে। শনি গ্রহের বুকে ২০ বছরের সফর সেরে এমন এক মন খারাপ করা বিদায় জানিয়েছিল কৃত্রিম উপগ্রহ ক্যাসিনি। মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা সেই বিদায়ের একটি ভিডিও প্রকাশ করেছিল। এবার নাসা সামনে নিয়ে এল বিদায় লগ্নে ক্যাসিনির তোলা কিছু চমকে দেওয়া ছবি। যা মোজাইক আকারে নাসা ২১ তারিখে বিশ্বের সামনে নিয়ে এসেছে।

ক্যাসিনি তার বিদায় লগ্নে ওয়াইড-অ্যাঙ্গেলের ক্যামেরায় রেড, গ্রিন ও ব্লু-তে মোট ৪২টি ছবি তোলে। শনির বায়ুমণ্ডলে বিলীন হতে হতে সেই ছবি নাসাকে পাঠিয়েছিল ক্যাসিনি। এতে শনি গ্রহের বৃত্তাকার রিং-এর ছবি যেমন আছে, তেমনি আছে শনি গ্রহের সব অসামান্য ছবি। চলতি বছরের ১৩ সেপ্টেম্বর নাসার দফতরে ক্যাসিনি-র পাঠানো এই ছবি নিয়ে এতদিন ব্যস্ত ছিলেন ইমেজ-স্পেশালিস্টরা। ক্যাসিনি এই ছবিগুলি পাঠিয়েছিল মোজাইক-এর আকারে। নাসার দফতরে এতদিন ধরে সেই ছবিগুলিকে একের সঙ্গে অপরকে জুড়ে জুড়ে পূর্ণরূপ দেওয়া হয়। এই ছবিতে শনিগ্রহ ছাড়াও তার উপগ্রহ প্রমেথুয়াস, টাইটান, প্যান্ডোরা, জানুস, এপিমেথুয়াস, মিমাস এবং এনসেলাডুস-এর ছবিও আছে।

বিজ্ঞানের জন্য শনির কক্ষপথে ক্যাসিনির খোঁজ যে এক যুগান্তকারী ব্যাপার তা যেন স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন নাসার জেট পপুলশন ল্যাবরেটরির রবার্ট ওয়েস্ট। তিনি আবার ক্যাসিনি-র পাঠানো ছবি জোড়া টিমের ডেপুটি লিডার-ও। স্বাভাবিকভাবেই ক্যাসিনির কথা বলতে গিয়ে বারবারই গলা ধরে এসেছে রবার্ট ওয়েস্ট-এর। টাইটান, এনসেলাডুস-এরও যে ছবি ক্যাসিনি পাঠিয়েছিল তা এক কথায় অনবদ্য বলেও দাবি করেছেন তিনি।

ক্যাসিনির পাঠানো ছবি হাতে পাওয়ার পরই তার স্মরণে এক অসাধারণ ফেয়ারওয়েলের পরিকল্পনা করে নাসার ইমেজ স্পেশালিস্ট টিম। কিন্তু, সবসময় বিদায় জানানোটা যে সোজা নয় তা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন জন হপকিন্স ইউনিভার্সিটি-র ফিজিক্স ল্যাবরেটরির ইমেজ সায়েন্টিস্ট এলিজাবেথ টারটেল

১৯৯৭ সালের ১৫ অক্টোবর শনির উদ্দেশে যাত্রা শুরু হয়েছিল ক্যাসিনির। শনির কক্ষপথে পৌঁছতে ক্যাসিনির সময় লেগেছিল ৭ বছর। ২০০৪-এর ৩০ জুন শনির কক্ষপথে প্রবেশ করেছিল ক্যাসিনি। এরপর ১৩ বছরেরও বেশি সময় ধরে শনি গ্রহ থেকে শুরু করে তার বিভিন্ন উপগ্রহ এবং শনির চারপাশে থাকা গ্যাসীয় রিং-এর উপরে বহু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাঠিয়ে গিয়েছিল নাসার এই কৃত্রিম উপগ্রহ। ২০১৭ সালের ২৬ এপ্রিল শুরু হয় ক্যাসিনির অন্তিম-যাত্রা। এর অন্তিম সফরে নিজের কর্তব্য একবারের জন্যও ভোলেনি ক্যাসিনি। টা-টা করতে করতেই সেই শনির বায়ুমণ্ডলে নিজের অন্তিম ক্ষণের দিকে এগিয়ে গিয়েছিল। ১৫ সেপ্টম্বর শনির বায়ুমণ্ডলে টুকরো টুকরো হয়ে বিলীন হয়ে যায় ক্যাসিনি। কিন্তু, তখনও চমক অপেক্ষা করছিল। কিন্তু, শেষ বিদায় যাত্রায় তখনও তার ক্য়ামেরায় শনি গ্রহের একের পর এক ছবি তুলে গিয়েছিল ক্যাসিনি। নাসা অবশেষে যা সামনে নিয়ে এল। চিরতরের বিদায় কতটা আবেগময় হতে পারে তা যেন প্রমাণ করে দিয়ে গেল এই কৃত্রিম উপগ্রহ ক্যাসিনি।

Category

📚
Learning

Recommended